গল্প: অজানা চিঠি
রাত তখন প্রায় বারোটা। অফিস থেকে ফিরেই রাহুল ক্লান্ত হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল। প্রতিদিনের মতোই ব্যস্ত দিন কেটেছে, কিন্তু আজকের দিনটা একটু অন্যরকম ছিল।
তার বাসার দরজার নিচ দিয়ে একটা চিঠি গলে এসেছে। এখনকার দিনে হাতে লেখা চিঠি? ব্যাপারটা কৌতূহল জাগানো।
চিঠিটা খুলে সে পড়তে লাগল—
“প্রিয় রাহুল,
তুমি হয়তো আমাকে ভুলে গেছো, কিন্তু আমি কখনো তোমাকে ভুলিনি। তুমি যদি সত্যিই জানতে, আমি কোথায় আছি, তাহলে হয়তো আজ তোমার জীবন বদলে যেত…”
রাহুলের হৃদস্পন্দন বেড়ে গেল। কে লিখতে পারে এটা? কোনো পুরনো বন্ধু? নাকি… অন্য কেউ?
চিঠির নিচে কোনো নাম লেখা নেই, শুধু একটা ঠিকানা—শহরের পুরোনো রেলস্টেশনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
২
পরদিন সন্ধ্যায় রাহুল অনেক ভেবেচিন্তে ঠিকানার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল। পুরনো রেলস্টেশন শহর থেকে একটু দূরে। এখন আর এখানে কোনো ট্রেন থামে না, সবকিছুই প্রায় পরিত্যক্ত।
রাতের অন্ধকারে জায়গাটা বেশ রহস্যময় মনে হচ্ছিল। দূর থেকে একটা লণ্ঠনের আলো দেখা গেল। ভয় পেলেও কৌতূহল দমন করতে পারল না রাহুল।
একটু এগিয়ে গিয়ে সে দেখল, একটা বেঞ্চে একজন বৃদ্ধ বসে আছেন। রাহুল কাছে যেতেই বৃদ্ধ হেসে বললেন—
“অবশেষে তুমি এলে, রাহুল।”
রাহুল অবাক হয়ে বলল, “আপনি কে?”
বৃদ্ধ গভীর চোখে তাকিয়ে বললেন, “তোমার অতীতের একজন।”
রাহুলের মাথার ভেতর এক ঝটকা লাগল। তার ছোটবেলার স্মৃতি ঝাপসা হয়ে উঠে এলো। এই চেহারাটা… কোথাও যেন সে দেখেছে!
৩
“তুমি কি তোমার ছোটবেলার সেই অচেনা বন্ধুটাকে মনে করতে পারছ?” বৃদ্ধ বললেন।
রাহুল মাথা নাড়িয়ে বলল, “আমি বুঝতে পারছি না…”
বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন, “তুমি যখন ছোট ছিলে, প্রায়ই এই স্টেশনে এসে এক লোকের সঙ্গে গল্প করতে। সে তোমার বাবার পুরনো বন্ধু ছিল। একদিন সে আচমকাই হারিয়ে যায়। তুমি তাকে কখনো খুঁজেছো?”
রাহুলের মনে পড়ল, হ্যাঁ! ছোটবেলায় সে এক অদ্ভুত লোকের সঙ্গে গল্প করত। কিন্তু একদিন সে আর আসেনি।
“তাহলে কি…?”
“হ্যাঁ, রাহুল,” বৃদ্ধ বললেন, “আমি সেই মানুষটাই।”
রাহুল হতবাক হয়ে গেল।
“কিন্তু আপনি কোথায় ছিলেন এতদিন?”
বৃদ্ধ একটু হেসে বললেন, “আমি তোমার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, রাহুল। তোমার কাছে একটা সত্যি কথা জানানোর ছিল।”
রাহুল শ্বাস আটকে শুনছিল।
“তোমার বাবার একটা গোপন সম্পদ ছিল, যা তোমাকে কখনো জানানো হয়নি। আমি ছিলাম তার বিশ্বাসভাজন। তোমার বাবা চেয়েছিলেন, তুমি যখন সত্যিই প্রাপ্তবয়স্ক হবে, তখনই তুমি এই সত্য জানতে পারবে।”
“কিন্তু কেন আমাকে বলা হয়নি?”
“কারণ কিছু লোভী মানুষ এটা হাতিয়ে নিতে চেয়েছিল। আমি গোপনে তোমার জন্য এটা রক্ষা করেছি।”
বৃদ্ধ একটা পুরনো কাঠের বাক্স বের করে দিলেন।
“এটা তোমার বাবার শেষ উপহার। এখন এটা তোমার হাতে তুলে দেওয়ার সময় হয়েছে।”
৪
রাহুল কাঁপা হাতে বাক্সটা খুলল। ভিতরে ছিল পুরনো কাগজের দলা ও একটা সোনার চাবি।
“এটা কী?”
“তোমার ভবিষ্যৎ,” বৃদ্ধ বললেন, “তোমার বাবার রেখে যাওয়া উত্তরাধিকার।”
রাহুলের চোখ ভিজে এল।
আজকের রাতটা বদলে দিল তার জীবন।
(শেষ)
কেমন লাগলো এই গল্প? আমাদের ওয়েবসাইটে আরও সাসপেন্স ও থ্রিলার গল্প পড়ুন!