ভূমিকা
শ্রাবণের রাত। আকাশ কালো মেঘে ঢাকা, বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, মাঝে মাঝে বিকট শব্দে বাজ পড়ছে। এমন এক রাতে, গ্রামের একটি পুরনো বাড়ির বারান্দায় বসে ছিল রুদ্র। তার চোখের সামনে ঝুম বৃষ্টি পড়ছিল, কিন্তু মনে চলছিল এক অন্যরকম ঝড়।
অতীতের ছোঁয়া
রুদ্র শহরে বড় হওয়া একজন তরুণ, কিন্তু তার দাদুর গ্রামে আসতে সবসময় ভালো লাগে। গ্রামের কাঁচা রাস্তা, বৃষ্টি ভেজা মাটির গন্ধ, আর দাদুর গল্প – এসব তার হৃদয়ে অন্যরকম প্রশান্তি এনে দেয়। তবে এই শ্রাবণের রাত তার জীবনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করল।
অজানা ডাক
বৃষ্টি আরও জোরে পড়তে শুরু করল। আচমকা, রুদ্র শুনতে পেল কারও গলার স্বর, যেন কেউ তাকে ডাকছে। সে চারদিকে তাকাল, কিন্তু কাউকে দেখতে পেল না। একটু ভয় পেলেও কৌতূহল তাকে টানল। সে ছাতা হাতে বেরিয়ে পড়ল কুয়াশাচ্ছন্ন বৃষ্টিভেজা পথে।
বাঁশবাগানের রহস্য
রুদ্রের কানে এল নরম অথচ করুণ স্বরে কেউ বলছে, “রুদ্র, আমাকে সাহায্য করো…” সে শব্দ অনুসরণ করে গ্রামের পুরনো বাঁশবাগানের দিকে এগিয়ে গেল। সেখানে পৌঁছে সে যা দেখল, তা তাকে স্তব্ধ করে দিল।
চোখে দেখা, মনের অনুভূতি
একজন মেয়ে, একদম সাদা শাড়িতে, বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে কাঁপছে। তার চেহারা ধোঁয়াশার মতো, যেন স্বপ্নের মতো অবাস্তব! রুদ্র বিস্মিত হয়ে জিজ্ঞাসা করল, “তুমি কে?”
মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “আমার নাম নন্দিনী। আমি… আমি এই গ্রামেই থাকতাম, বহু বছর আগে…”
রহস্যের উন্মোচন
রুদ্রের মনে হলো সে এই নাম শুনেছে, কিন্তু কোথায়? তার দাদুর পুরনো গল্পগুলোর কথা মনে পড়ল। নন্দিনী নামের এক মেয়ে বহু বছর আগে এই গ্রামে হারিয়ে গিয়েছিল। কেউ তাকে খুঁজে পায়নি, তার গল্প আজও গ্রামের বয়স্কদের মুখে শোনা যায়।
রুদ্র হতবাক! সে কি সত্যিই অতীতের কোনো আত্মার সঙ্গে কথা বলছে?
শেষ পরিণতি
বৃষ্টি কমে আসছিল, কিন্তু রুদ্রের হৃদয়ের স্পন্দন বেড়ে যাচ্ছিল। নন্দিনী ধীরে ধীরে হাসল, তারপর বলল, “ধন্যবাদ, রুদ্র। এবার আমি মুক্ত…”
এই কথা বলেই সে মিলিয়ে গেল, যেন কখনো ছিলই না। রুদ্র একা দাঁড়িয়ে থাকল, তার শরীর ঠান্ডা হয়ে গেল, কিন্তু মনে একটা অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করল।
উপসংহার
সেদিনের পর থেকে রুদ্র বুঝতে পারে, কিছু রহস্য এই পৃথিবীতে কখনো পুরোপুরি ব্যাখ্যা করা যায় না। শ্রাবণের সেই রাত তার জীবনে এক নতুন রহস্যের দরজা খুলে দিয়েছিল। সে কি সত্যিই অতীতের কোনো আত্মার সঙ্গে কথা বলেছিল, নাকি ছিল কেবল কল্পনা? উত্তরটা শুধু রুদ্রই জানে…